পুরো ঢাকা সিসিটিভি আওতায় আনা জরুরি কেন?
				 
															ঢাকা, দেশের প্রাণকেন্দ্র এবং সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে একটি। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তাঘাট, গলি, বাসস্ট্যান্ড, মার্কেট এবং আবাসিক এলাকা মানুষের ভিড়ে ভরে থাকে। কিন্তু এই ভিড়ের আড়ালে ঘটে চলেছে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং সড়ক দুর্ঘটনার মতো নানারকম ঘটনা। এসব অপরাধ প্রমাণ ও চিহ্নিত করার অভাবে অপরাধীরা ধরা পড়ে না, ফলে অপরাধের সংখ্যা বাড়তেই থাকে।
সাম্প্রতিক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (DMP) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটনের ৫০টি থানায় ১,০৬৮টি চুরি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নারীদের শ্লীলতাহানী, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিনিয়ত ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ সিসিটিভি মনিটরিং ব্যবস্থা ঢাকার জন্য একটি অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়ায়।
জরুরি কেন? সিসিটিভি ক্যামেরা অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে
বিশ্বের বড় শহরগুলো লন্ডন, বেইজিং, সিঙ্গাপুর, অপরাধ দমন এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যামেরা বসানো থাকায় অপরাধীরা সহজে পালাতে পারে না, প্রমাণ লোপাটও কঠিন হয়ে পড়ে।
ঢাকায় কিছু এলাকায় ক্যামেরা বসানো হলেও তা সীমিত ও অকার্যকর। সম্পূর্ণ ঢাকা শহরকে এক সমন্বিত নজরদারি ব্যবস্থার আওতায় আনা হলে:
- অপরাধ দমন সহজ হবে এবং অপরাধীর উপর তাৎক্ষণিক মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হবে। 
- বিচার প্রক্রিয়ায় নির্ভরযোগ্য ভিডিও প্রমাণ দ্রুত পাওয়া যাবে। 
- নাগরিকদের জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও স্বস্তি নিশ্চিত হবে। 
- নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। 
সিসিটিভি: ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও উন্নত নগর ব্যবস্থাপনার সুবিধা
সিসিটিভি কেবল অপরাধ দমনে সীমাবদ্ধ নয়। এর মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং নগর পরিচালনা আরও কার্যকর করা সম্ভব:
- প্রতিটি মোড় ও সিগন্যাল মনিটর করে যানজট কমানো ও ট্রাফিক আইন প্রয়োগ। 
- দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী দলকে সঠিক তথ্য সরবরাহ। 
- ফুটপাথ দখল, অবৈধ পার্কিং, ময়লা ফেলা ইত্যাদি শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা। 
- জনসাধারণের সুবিধা নিশ্চিত করা। 
বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান: অর্থ, জনবল ও সাইবার সিকিউরিটি
সম্পূর্ণ ঢাকাকে সিসিটিভি আওতায় আনার জন্য বিপুল অর্থ ও প্রযুক্তি প্রয়োজন। প্রতিটি ক্যামেরা স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধুনিক মনিটরিং সেন্টার তৈরি করা জরুরি। সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত না করলে ভিডিও ডেটা অপব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তবে সমন্বিত পরিকল্পনা, দক্ষ জনবল এবং স্বচ্ছ নীতিমালা থাকলে এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা সম্ভব। সরকারের পাশাপাশি নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বড় মার্কেট, আবাসিক এলাকা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথভাবে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।
নিরাপত্তা ও নাগরিক আস্থা: সিসিটিভি কিভাবে ঢাকা শহরকে পাল্টে দেবে?
ঢাকা এখন একবিংশ শতাব্দীর মেগাসিটি। তবে এর নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা এখনও পিছিয়ে। সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় পুরো ঢাকা আনা গেলে:
- নাগরিকদের দৈনন্দিন ভোগান্তি কমবে। 
- বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। 
- নাগরিকদের আস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। 
এটি শুধু অপরাধ দমন নয়; এটি নাগরিক আস্থা, বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নগর ব্যবস্থাপনার উন্নতি নিশ্চিত করার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখনই সময় পুরো ঢাকাকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি জানানোর।
